আজ, বৃহস্পতিবার | ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | সকাল ৭:১৬

ব্রেকিং নিউজ :
শ্রীপুরে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী রাজন-সংগ্রামের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ জমে উঠেছে শ্রীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচন মাগুরায় জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উদযাপন বৃষ্টির প্রার্থনায় নামাজ পড়ে কাঁদলেন শ্রীপুরের মুসল্লিরা মহম্মদপুরে সড়ক দূর্ঘটনায় শিক্ষকের মৃত্যু মাগুরায় প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ মাগুরায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন জাহিদুর রেজা চন্দন ও নবীব আলী মহম্মদপুরে চেয়ারম্যান পদে ৯ জন শালিখায় ৫ জনের মনোনয়ন পত্র জমা স্মৃতির আয়নায় প্রিয় শিক্ষক কাজী ফয়জুর রহমান স্মৃতির আয়নায় প্রিয় শিক্ষক কাজী ফয়জুর রহমান

চলে গেলেন কামান্না যুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ সামাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলে গেলেন কামান্না যুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ সামাদ। ১৩ ফেব্রুয়ারি সকাল আটটায় তিনি পারনান্দুয়ালি ব্যাপারী পাড়া নিজস্ব বাসভবনে ইন্তেকাল করেন। বাদ জোহর জানাযা শেষে তাঁকে দাফন করা হয়। দাফনের আগে তাঁকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে গার্ড অফ অনার প্রদান করা হয়।

প্রয়াত এই বীর মুক্তিযোদ্ধার আদি নিবাস শ্রীপুর উপজেলার শ্রীকোল ইউনিয়নের বরিশাট গ্রামে। পরে তিনি পারনান্দুয়ালী ব্যাপারীপাড়াতে বসবাস করেন। তার বাবার নাম- মরহুম হারুনার রশিদ, মায়ের নাম- মরহুমা সবুরা খাতুন। কামান্না যুদ্ধ থেকে যেকজন যোদ্ধা প্রাণে বেঁচে এসেছিলেন এর মধ্যে অন্যতম ছিলেন তিনি। একাত্তরের ২৬ নভেম্বর কামান্না যুদ্ধে তিনি আহত হয়েছিলেন। মৃত্যু অব্দি যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি সম্মানিত হয়েছেন।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধা সামাদ প্রথমে ভারতের মাজদিয়া ইয়থ ক্যাম্পে যোগ দেন। এরপর কল্যাণী হয়ে বিহারের চাকুলিয়া থেকে গেরিলা ট্রেনিং নিয়ে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে মাগুরাতে এসে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে থাকেন। তিনি ছিলেন গ্রুপ কমান্ডার। তার অধীনে ছিল আরো কয়েকজন গেরিলা যোদ্ধা।

জাহিদ রহমানের লেখা মুক্তিযুদ্ধে কামান্নার ২৭ শহীদ বইতে একাত্তরের ২৬ নভেম্বর কামান্না যুদ্ধের ভয়াবহতা বর্ণনা তিনি করেছেন এভাবে ‘শেষ রাতে পাক আর্মিরা হঠাৎ করে আমাদের তিন পাশ ঘিরে আমাদের অবস্থানের উপর বেপরোয়া গুলিবর্ষণ করতে থাকে। স্বভাবতই আমরা দিকবিদিক হারিয়ে ফেলি। জীবন বাঁচানোর জন্যে মরিয়া হয়ে উঠি। হানাদারদের প্রথম আক্রমণেই অনেক সহযোদ্ধাকে আমরা হারিয়ে ফেলি। আমার কাছে ছিল একটা এলএমজি। ওদের প্রচণ্ড গুলিবর্ষণের মাঝেই আমি এলএমজি পিঠে নিয়ে দ্রুত ক্রলিং করে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ি। ক্রলিং করে আমি ডানদিক দিয়ে এগিয়ে নদীর ধারের দিকে যাই। ওখানে একটা গাছের গোড়ায় শেল্টার নিই। গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে আমি ব্রাশ টানতে থাকি। আমি বেশ কয়েক রাউণ্ড গুলি করি। হঠাৎ বাম পাঁজরে গুলিবিদ্ধ হই। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আমি এলএমজি পিঠে নিয়ে ক্রলিং করতে থাকি। এরপর বেয়নেট দিয়ে আমার গেঞ্জি শরীর থেকে ছিঁড়ে ফেলি। দেখি শরীর থেকে আমার রক্ত বের হচ্ছে।

তিনি বলেন, আগে থেকে আমাদের গেরিলাদের কাছে এক ধরনের ওষুধ থাকতো। প্রয়োজনে সেটা গুলিবিদ্ধ স্থানে লাগানোর প্রশিক্ষণ ছিল। আমি আমার গুলিবিদ্ধ জায়গাতে ঐ ওষুধ লাগাই আর গেঞ্জি দিয়ে জায়গাটা বেঁধে ফেলি। বুঝতে পারি শরীর থেকে আর রক্ত বের হচ্ছে না। এরপর আমি এলএমজি পিঠে নিয়ে ক্রলিং করে গোবরের বড় এক গাদার কাছে পজিশন নিয়ে বসে থাকি। পাকবাহিনী চলে গেলে গ্রামবাসী আমাকে উদ্ধার করে। প্রথমে গ্রামবাসী স্থানীয় এক ডাক্তারকে দিয়ে আমার চিকিৎসা করায়। তারপর ঝিনেদাতে গিয়ে আমি চিকিৎসা নিই। কামান্নার যুদ্ধে আমার এক আত্মীয়ও মারা যায়। ওর নাম তাজরুল ইসলাম তাজু। বয়সে ও আমার ছোট ছিল। মনে আছে পাকবাহিনী হামলা করলে তাজু আমাকে বলে, মামা আমাকে বাঁচান। কিন্তু তাজু ওখানেই শহীদ হয়। শহীদ হয় আমার অন্য সহযোদ্ধারাও।’

একাত্তরের এই বীর সেনানীর মৃত্যুতে স্থানীয় এমপি এডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের কেন্দ্রিয় সদস্য জাহিদুল আলম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নেতৃবন্দসহ আরও অনেকে শোক প্রকাশ করেছেন।

শেয়ার করুন...




©All rights reserved Magura Protidin. 2018-2022
IT & Technical Support : BS Technology